সোহেল রানা | বুধবার, ২৩ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
শিক্ষা ব্যবস্থা যে কোন জাতির অগ্রগতির প্রধান চালিকাশক্তি।যার চালকের আসনে প্রধান ভূমিকা পালন করে শিক্ষক।কিন্তু বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশে অবস্থান করলেও এদেশে একজন এমপিও ভুক্ত শিক্ষক মাত্র ১০০০টাকা বাড়িভাড়া,৫০০টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং উৎসবভাতা ২৫% পান যা হাস্যকর এবং শিক্ষকদের সংসার চালানো কঠিন। শিক্ষাখাতে বাজেটের বেশিরভাগ খরচ হচ্ছে অবকাঠামো, প্রযুক্তিখাত ও বিদেশ ভ্রমণে ।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের খোলা আকাশের নিচে অভূক্ত রেখে শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয় ।
অন্যদিকে অনলাইন ব্যাংক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টাকা সরাসরি সরকারি কোষাগারে নেওয়ার জন্য একটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে যে টাকা আয় করা সম্ভব তাতেই শিক্ষাখাত জাতীয়করণ করা যাবে বলে আমার বিশ্বাস।কারণ এর ফলে টাকার অপচয় ও দূর্নীতি রোধ হবে।
বর্তমানে যে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে সেটি হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে শিক্ষার্থীরা টাকা জমা দিবে। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ।কারণ সরাসরি অর্থ লেনদেন থেকে অনেক সময় মানুষের মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়,হোক সেটা শিক্ষক শিক্ষার্থীর মধ্যে।
সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের জন্য যে ইউনিক আই ডি তৈরির কথা বলছে এবং এ ব্যাপারে নোটিশও দেওয়া হয়েছে। এই ইউনিক আই ডি আর্থিক লেনদেনও ব্যবহৃত হতে পারে এবং সেটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে পারে এবং সরকারের শিক্ষাখাতের আর্থিক সংকট দূর করে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে।
বর্তমান অনলাইন ব্যাংক ব্যবস্থা প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের প্রায় কাছাকাছি অবস্থিত বললেই চলে।এই অবস্থায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা ব্যবস্থায় এর চেয়ে ভালো অবদান রাখতে পারে অনলাইন ব্যাংক ও একটি অনলাইন সফটওয়্যার কাজে লাগিয়ে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমন একটি অনলাইন সফটওয়্যার বানাবে ,যেখানে এজেন্ট ব্যাংকে গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজ ইউনিক আই ডি এবং অন্যান্য ব্যক্তি ভোটার আই ডি কার্ড ও বিদ্যালয়ের EIIN নাম্বার দিয়ে যাবতীয় টাকা পরিশোধ করবে।
প্রধানত যারা এর আওতায় আসতে পারে
১।শিক্ষার্থীরা,
২।যারা প্রতিষ্ঠানের দোকান ভাড়া নিবে,
৩।যারা প্রতিষ্ঠানের হাট ইজারা নিবে,
৪। যারা প্রতিষ্ঠানের জমি ইজারা নিবে,
৫। যারা গাছ বা অন্যান্য বস্তু প্রতিষ্ঠান হতে ক্রয় করবে।
তারা যে কোন এজেন্ট ব্যাংকে গিয়ে ঐ প্রতিষ্ঠানের EIIN নাম্বার দিলে একটি রশিদ চলে আসবে এবং তারা যে বিষয়ের টাকা দিবে সেই বিষয় সিলেক্ট করেই টাকা দিবে এবং সেই টাকা চাকরির আবেদন করার মত কয়েকটি নির্দিষ্ট একাউন্টে জমা হবে যা শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের একাউন্ট। তবে এক্ষেত্রে কোন প্রতিষ্ঠানের কত টাকা জমা হলো তা আলাদা ভাবে নির্ণয় করা যাবে।এতে প্রতিষ্ঠানের সকল আয় সরকারের একাউন্টে জমা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সফটওয়্যারের সাথে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংযোগ থাকার কারণে প্রতিষ্ঠানও টাকা জমার বিষয় দেখতে পাবে। তাছাড়া এজেন্ট ব্যাংকের রশিদ সংরক্ষণ তো করবেই। আবার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের EIIN নাম্বার হতে কত টাকা প্রতিবছর জমা হচ্ছে সেগুলো জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা আকারে প্রকাশ করতে হবে যাতে দেশের মানুষ বুঝতে পারে জমাকৃত টাকার হিসাব ঠিকঠাক হচ্ছে।
এই জমাকৃত টাকা দিয়ে সরকার যা যা করতে পারে:
১। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি।
২। শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি।
৩।শিক্ষকদের চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধি।
৪।গরিব শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান।
৫।বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিচালনার খরচ প্রদান
৫।সর্বোপরি শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা যাবে।
সুতরাং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি শিক্ষা ব্যাবস্থা জাতীয়করণ করা এখন শুধু মাত্র সময়ের ব্যাপার।কারণ শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান একটি মাত্র সফটওয়্যার এর মাধ্যমে করা যাবে।
এর ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান প্রধান ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির হাতে নগদ অর্থের লেনদেন না থাকায় উনাদের প্রতি প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারীর সাথে সমাজের মানুষেরও ইতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। আর্থিক লেনদেনের অনিয়ম ও অবিশ্বাস থেকেই শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয় যা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার বৈরি পরিবেশ তৈরি করে।বিষয়টি ভেবে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সকলকে অনুরোধ করছি।
লেখক: মোঃ সোহেল রানা
প্রভাষক(সমাজবিজ্ঞান), শোমসপুর আবু তালেব কলেজ
খোকসা, কুষ্টিয়া।
[বি.দ্র: মতামতটি একান্তই লেখকের, যা হুবুহু প্রকাশিত হলো। এই লেখার সাথে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই]
লেখা পাঠান আমাদের নিকট : shiksharalo.news@gmail.com
লিখুন শিক্ষা বিষয়ক সংবাদ, ফিচার, কলাম, মতামত। পাঠিয়ে দিন উপরোক্ত পত্রিকার মেইলে। লেখার শেষে মোবাইল নম্বর ও ছবি পাঠাতে ভুলবেন না , ধন্যবাদ…………………………….
ফলো করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : শিক্ষার আলো ডট কম
ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল : Shikshar Alo
Posted ১১:২৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৩ আগস্ট ২০২৩
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো